কুরবানির ত্যাগের মহিমায় ভরা ঈদ-উল-আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতা হল দুই রাকাত ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম মেনে জামাতের সাথে সালাত আদায় করা। অনেকেই সময়, তাকবিরের সংখ্যা বা খুতবার আদব নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। আজকের এই গাইডে আমরা প্রস্তুতি থেকে সালাম ফেরানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ স্পষ্ট করব, যাতে আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে সুন্নাহ অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে পারেন।
১. নামাজের সময় ও স্থান
সুর্য ওঠার ১৫–২০ মিনিট পর থেকে জোহরের সময়ের আগ পর্যন্ত ঈদের সালাত আদায় করা যায়। খোলা মাঠ (ঈদগাহ) সুন্নাহসম্মত; মসজিদেও পড়া বৈধ। আবহাওয়ার সমস্যা এড়াতে ছাতা বা চট বিছানোর প্রস্তুতি রাখুন।
২. সুন্নাহ প্রস্তুতি: গোসল, সুগন্ধি ও তাকবীর
- গোসল: ফজরের পর স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরা সুন্নত।
- সুগন্ধি: পুরুষদের হালকা আতর ব্যবহার পছন্দনীয়; নারীরা গৃহে নামাজ পড়লে অপসন্দনীয় সুগন্ধ এড়িয়ে চলুন।
- তাকবীরে তাশরিক: ফজর-এর পর থেকেই “আল্লাহু আকবার…” উচ্চ কণ্ঠে বলা ইবাদত।
৩. নিয়ত ও কাতারবিন্যাস
নিয়ত: “আমি আল্লাহ তাআলার জন্য দুই রাকাত ঈদুল আজহার নামাজ ইমাম সাহেবের অনুসরণে কিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।” কাতারে ফাঁক কম, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ান। ফাঁকা জায়গা থাকলে পেছনের কাতার তোলার আগে সামনে পূরণ করুন।
৪. দুই রাকাতের ধাপে-ধাপে গঠন
- প্রথম রাকাত
• তাকবিরে তাহরিমা (হাত বাঁধা)
• অতিরিক্ত তিন তাকবির—প্রতিবারে হাত কানের লতি পর্যন্ত তুলে ছেড়ে দিন
• সুরা ফাতিহা + সুরা الأعلى/কাফিরুন ইত্যাদি
• রুকু, সিজদা শেষে দাঁড়ানো - দ্বিতীয় রাকাত
• সুরা ফাতিহা + সুরা الغاشية/إخلاص ইত্যাদি
• অতিরিক্ত তিন তাকবির—প্রতিবারে হাত তুলে ছেড়ে দিন, তৃতীয় তাকবিরের পরে হাত বাঁধবেন না
• চতুর্থ তাকবিরে রুকুতে গমন, এরপর সিজদা ও তাশাহহুদ
• সালাম ফেরানো
৫. ঈদের খুতবা ও করণীয়
সালাম ফেরানোর পর ইমাম দুই খুতবা প্রদান করেন—শোনা ও চুপ থাকা ওয়াজিবের কাছাকাছি গুরুত্বের। খুতবার সময় হাঁটাহাঁটি, ফোন ব্যবহার বা কথা বলা উচিত নয়। খুতবা শেষে কুরবানি, সালাম, মুসাফাহা ও শুভেচ্ছা “ঈদ মোবারক” বিনিময় করবেন।
৬. সাধারণ ভুল ও তাদের সংশোধন
- খেজুর খাওয়া: ঈদুল ফিতরের সুন্নাহ; ঈদুল আজহায় কোরবানি আগে কিছু খাওয়া নুসৃত নয়।
- লম্বা দোয়া: তাকবিরের পর অতিরিক্ত দোয়া না পড়াই উত্তম; ইমাম কিরাত পড়বেন।
- তাকবিরের সংখ্যা: আজহায় ছয় বা তিন ছাড়া সংখ্যা বাড়ানো বিদআত।
৭. বিশেষ পরিস্থিতি: বাড়িতে নামাজ ও স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা
মহামারী, অতিবৃষ্টি বা সরকারি নির্দেশে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ হলে চার-পাঁচ জনে বাড়িতে জামাত গঠন করে একই ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম অনুসরণে দুই রাকাত পড়া বৈধ। খুতবা সংক্ষিপ্ত করুন, প্রতিবেশী বিরক্ত না হয় সেই খেয়াল রাখুন।
শেষ কথা
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সহি ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম পালনও অপরিহার্য। উপরের ধাপগুলো অনুশীলন করুন, পরিবারের সবাইকে শিখিয়ে দিন, যেন সকলে সালাতের পূর্ণ ফজিলত লাভ করে। গাইডটি উপকারী মনে হলে বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে শেয়ার করুন—“ঈদ মোবারক” !